অল্প বয়সে চুল পাকার সমাধান এবং চুল পাকা রোধে ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আমাদের অনেকের অজানা। এ সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো।
অল্প বয়সে চুল পাকা এখন যেন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। তবে আপনার সামান্য চেষ্টায় চুল পাকা রোধ এবং আবার পাকা চুল কালো করতে পারবেন প্রাকৃতিক ভাবেই। বর্তমান সময়ে খুব অল্প বয়সে অর্থাৎ ২০ বছরের আগেই অনেকের চুল পেকে যাচ্ছে। যা এখন অতি স্বাভাবিক ব্যপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বর্তমান সময়ে ছেলে-মেয়ে উভয়েরই চুল পাকা বা চুল সাদা হয়ে যাচ্ছে। আর সমস্যার জন্য আমরা নিজেরাই দ্বায়ী। আমাদের খাদ্যাভাস, মানুষিক চিন্তা, পরিছন্নতা ইত্যাদি কারনে চুল পেকে যায় বা সাদা হয়ে যায়। আমরা সহজেই মেনে নিতে পারিনা এই সমস্যা অর্থাৎ চুল পেকে যাওয়া।
আমরা যখন কোন অনুষ্ঠানে বা কোন অপরিচিত মানুষের সামনে যাই এই অবস্থায় তখন নিজেদের খুব অসহায় মনে হয়। নিজেকে অনেক ছোট মনে হয়। বয়স বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে চুল পেকে যাওয়া খুব স্বাভাবিক, আমাদের সমাজ তখন বয়সের সাথে সাথে খুব সহজেই মেনে নেয়।
আমাদের শরীরের অন্যান্য ছোট খাট সমস্যা নিজেকে মানিয়ে নেয় কিন্তু অকালে চুল পেকে যাওয়া এবং চুল পড়ে যাওয়া কোন ভাবেই আমরা মেনে নিতে পারিনা।
অল্প বয়সে চুল পাকার কারন কি?
- পুষ্টির অভাবে চুল পাকাঃ কম বয়সে চুল পাকার অন্যতম প্রধান কারন পুষ্টির অভাব। আমাদের অধিকাংশ মানুষের চুল পাকার কারন আমাদের শরীর ক্যারোটিন সরবরাহ করতে পারছেনা। চুলের রঙ নির্ধারক পিগমেন্টেশন উৎপাদন ক্ষমতা হারালে চুল পেকে যায় কম বয়সে।
- অতিরিক্ত স্ট্রেস বা দুঃচিন্তাঃ অতিরিক্ত স্ট্রেস বা দুঃচিন্তার কারনে আমাদের চুল পাকার আরো একটি অন্যতম কারন। কারন যখন মানুষিক চিন্তা করা হয় তখন শরীরের নানান সমস্যা দেখা দেয়। শরীর তখন খাবার হজম করতে পারেনা, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়। এসময় শরীর পুষ্টি নিতে পারেনা তাই চুল পেকে যাওয়া স্বাভাবিক।
- ধুমপান চুল পাকার অন্যতম কারনঃ আমরা যারা অনেক বেশি পরিমানে ধুমপান করে থাকি তাদের শরীরের কোষ গুলো ধীরে ধীরে সংকুচিত হতে থাকে। এতে শরীরের অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যায়। তাই শরীর এনার্জি তৈরী করতে পারে না। একারনে দ্রুত চুল সাদা বা পেকে যাচ্ছে।
- চুলে ক্যামিক্যাল বা রঙ ব্যবহারঃ বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজে হর-হামেশায় দেখা যায় যুবক-যুবতীরা চুলে রঙ বা কালার ব্যবহার করছে। যে রঙ বা কালার ব্যবহার করা হয় এই রঙে ব্যবহার করা হয় যা কালো চুলের জন্য ক্ষতিকর। নিয়মিত চুলে রঙ বা কালার ব্যবহার করলে দ্রুত চুল পেকে যেতে পারে।
- খারাপ খাদ্যাভাসঃ দিন দিন আমরা স্বাভাবিক খাদ্যাভাস থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। অর্থাৎ যেসকল খাবার আমাদের শরীরে পুষ্টিগুন চাহিদা পুরন করে সেসকল খাবার খাচ্ছি না। বিশেষ করে ভিটামিন বি ১২ এর ঘাটতির জন্য এছাড়া সবুজ শাক-সবজি আমাদের খাদ্য তালিকায় না রাখা চুল পাকার অন্যতম কারন।
- প্রখর রোদের প্রভাবঃ আমরা প্রচন্ড রোদে যখন যায় তখন আমাদের চুলকে অনেক ক্ষতি করে। কারন সূর্যের আলট্রাভায়োলেট রশ্মি বা অতিবেগুনী রশ্মি আমার চুলকে ব্যাপক ভাবে ক্ষতি করে। শুধু চুল নয় আমাদের শরীরের চামড়ার ক্ষতি করে। এতে চুল পাকা শুরু করে অল্প বয়সে। অতএব দুপুর ১২ টার পর থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত এই সময়ের মধ্যে রোদে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- বংশগত কারনঃ যদি চুল পাকা বংশগত হয় তাহলে কম বয়সে চুল পাকতে পারে।
- পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবঃ শুধু চুল নয় আমাদের সম্পুর্ন শরীরকে সুস্থ্য থাকতে হলে উপযুক্ত ঘুম দরকার। রাত ১১ টা থেকে মধ্য রাত ৩ টা পর্যন্ত অবশ্যই ঘুমাতে হবে। কারন মানুষের শরীরের সকল হরমন কাজ করে এই সময়ের মধ্যে। এই সময়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের সমস্যা হলে অল্প বয়সে চুল পাকা সহ শরীরের যেকোন সমস্যা হবেই।
অল্প বয়সে চুল পাকার সমাধান
- পুষ্টিকর খাবারঃ আমাদের এমন খাবার খাওয়া উচিৎ যে খাবার আমাদের শরীরের চুলের রঙ তৈরী করতে পারে। এবং সকল প্রকার বাইরের খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
- কালোজিরা তেল ব্যবহারঃ প্রতিদিন নিয়ম করে কালোজিরা তেল চুলে ব্যবহার করতে পারেন। এতে ধীরে ধীরে আপনার পাকা চুল দূর হতে পারে।
- ওমেগা ৩ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে প্রচুর পরিমানে। ওমেগা ৩ সমৃদ্ধ খাবার যেমনঃ ইলিশ মাছ, কালোজিরা, চিয়াসিড নিয়মিত খেতে হবে।
- পর্যাপ্ত ঘুম দরকার হবে বিশেষ করে রাত ১১ টা থেকে রাত ৩ টা পর্যন্ত অবশ্যই ঘুমাতে হবে, মোট ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে।
- সূর্যের আলট্রাভায়োলেট রশ্মি এড়িয়ে যেতে হবে অর্থাৎ প্রখর রোদে সূর্যের আলোতে আমরা বাইরে যাব না।
- এন্টিওক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার অর্থাৎ ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই যুক্ত খাবার খেতে হবে প্রচুর পরিমানে।
- ধুমপান বন্ধ করে দিতে হবে তাহলে চুল পাকা ধীরে ধীরে কমে যাবে।
- আমলকি ও লেবুর রস খেতে পারেন চুল পাকা প্রতিরোধ করতে।
- বাজারের ক্যামিকেল যুক্ত কোন ঔষধ ব্যবহার করবেন না।
- চুলে নারিকেল তেল ব্যবহার করুন নিয়মিত। তবে এক্ষেত্রে এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট ওয়েল হলে উপকার বেশি।
- বাদাম জাতীয় খাবার খেতে পারেন পর্যাপ্ত যেমন কাঠ বাদাম, কাজু বাদাম, এভাকাডো ইত্যাদি।
অল্প বয়সে চুল পাকা থেকে চুলকে বাচাতে উপরোক্ত নিয়ম অনুসারে চলতে হবে। তাছাড়া বংশগত কারনে দ্রুত চুল পাকতে পারে।
যদি চুল পাকা কম থাকে তাহলে শরীরের মেলানিন পেগমেন্টেশন তৈরী করে, এটা আবার চালু করতে পারলে আবার পাকা চুল পুনারায় কালো হতে পারে।
গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি সমস্যা হয়? | এ থেকে মুক্তির উপায়
চুল পাকা রোধে ঘরোয়া উপায়
আমরা অনেকে অল্প বয়সে চুলপাকা সমস্যাতে ভুগছি। ঘরোয়াভাবে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করলে চুল পাকা রোধ করা সম্ভব।
চুল পাকা রোধে ঘরোয়া উপায়:—
- আদা বাটার সাথে অলিভ অয়েল মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগাতে হবে। এটি আধা ঘন্টা রেখে তারপর ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি নিয়মিত ব্যবহার করার ফলে চুল পড়া এবং পাকা রোধ করা যায়।
- টমেটো বাটা, লেবুর রস এবং দই একসাথে মিশিয়ে সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করলে চুল দ্রুত কালো হয়।
- পেয়ারা পাতাতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি থাকে। পেয়ারা পাতা বেটে নিয়মিত চুলে লাগালে এটি চুল কালো করতে সাহায্য করে।
- শুকনো লাউয়ের সাথে নারকেল তেল ভিজিয়ে রেখে। তেলটা মাথায় মেসেজ করলে চুল কালো হয়।
- পেঁয়াজ বাটা এবং জবা ফুল বেটে পেস্ট করে মাথায় নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল কালো হয়।
চুল পাকা বন্ধ করার খাবার
বিভিন্ন খাবার খাওয়ার মাধ্যমে চুল পাকা অনেকখানি বন্ধ করা সম্ভব।
চুল পাকা বন্ধ করার খাবার:—
- কাঁচা ছোলা চুল পাকা বন্ধ করার অত্যন্ত কার্যকর একটি খাবার। প্রতিদিন রাতে ছোলা ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে এটি খেলে চুল পাকা বন্ধ হতে সাহায্য করে এবং আস্তে আস্তে চুল কালো হয়ে যায়।
- প্রতিদিন আধা গ্লাস গাজরের রস আপনার চুল পাকা বন্ধের অন্যতম খাবার হতে পারে।
- বাদাম অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। নিয়মিত বাদাম খেলে আপনি চুল পাকা সমস্যা থেকে অনেকটাই নিরাপদে থাকতে পারেন। বাদাম খাওয়ার সাথে সাথে আপনি চুলে বাদামের তেল ব্যবহার করতে পারেন।
চুল পাকা বন্ধ করার তেল
বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ চুলে কোন ধরনের তেল ব্যবহার করে না। যার ফলে চুল বিভিন্ন অপুষ্টিতে ভোগে। যার কারনে দেখা দেয় চুল পাকার সমস্যা।
চুলে নিয়মিত নারিকেলের তেল, অলিভ অয়েল এবং সরিষার তেল ব্যবহার করলে চুল পাকা সমস্যা বন্ধ করা সম্ভব।
চুল পাকা সম্পর্কে কিছু প্রশ্নের উত্তর:—
চুল পাকার কারণ কি?
অতিরিক্ত পরিশ্রম কিংবা অতিরিক্ত মানুষ চাপের বিভিন্ন প্রভাব মাথার চুল এবং ত্বকের উপর যেয়ে পড়ে। ফলে এসব মানুষ দ্রুত চুলপাকা সমস্যায় ভোগে।
চুল কালো করার তেলের নাম কি?
চুল কালো করতে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক তেল অনেক উপকারে আসতে পারে। উপরে চুল কালো করার তেল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
প্রাকৃতিক উপায়ে কিভাবে চুল কালো করা যায়?
ঘরোয়া এবং প্রাকৃতিক উপায়ে খুব সহজে চুল কালো করা সম্ভব। উপরে প্রাকৃতিক উপায়ে কিভাবে চুল কালো করা যায় এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
2 thoughts on “অল্প বয়সে চুল পাকার সমাধান | চুল পাকা রোধে ঘরোয়া উপায়”