ডার্ক চকলেট এর উপকারিতা ও ডার্ক চকলেট খাওয়ার নিয়ম অনেকের অজানা । সাধারন চকলেট সকল বয়সের মানুষ পছন্দ করলেও। ডার্ক চকলেটের মুল উপাদান কোকোয়া ফল প্রাচীন যুগ থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে।
এটি দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন উপতক্যায় উদ্ভিদ হলে এখন বেশ পরিচিত সমাজে। বাজারের চকলেট বা ডার্ক চকলেট গুলো সাধারনত মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে। প্রকৃত ডার্ক চকলেটের স্বাদে তিতা হয়ে থাকে।
ডার্ক চকলেটের রয়েছে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম, এন্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যাফেইন, থিওব্রোমাইন বিদ্যমান যা আমাদের মানব দেহের জন্য অত্যান্ত জরুরী এবং উপকারি।
ডার্ক চকলেট বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া আমাদের জন্য দুরহ ব্যাপার। তবে আপনি চাইল খুব সহজে বাড়িতে অর্গানিক ডার্ক চকলেট তৈরী করতে পারেন। জেনে নিন কিভাবে ডার্ক চকলেট বাড়িতে তৈরী করতে পারেন।
ডার্ক চকলেট এর উপকারিতা কি?
রক্ত চলাচল স্বাভাবিকঃ
ডার্ক চকলেটে রয়েছে কোকোয়া উপাদান। কোকোয়ার শক্তিতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা ভুগছেন তাদের উচিৎ সাধারন চকলেট এড়িয়ে নিয়মিত ডার্ক চকলেট খাওয়া।
স্ট্রোকের ঝুকি কমায় ডার্ক চকলেটঃ
আমাদের পরিবারে অনেকে আছেন যাদের শরীরে কোলেস্টরলের পরিমান অনেক বেশি থাকে। ডার্ক চকলেট দীর্ঘদিন ধরে খাওয়ার কারনে ধমনী পরিষ্কার করে কোলেস্টরল দূর করে। এতে স্ট্রোকের ঝুকি কমে যায়।
তাই স্ট্রোকের ঝুকি কমাতে নিয়মিত ডার্ক চকলেট খাওয়া আমাদের জন্য খুব জরুরী।
হৃদযন্ত্র ভাল রাখতে ডার্ক চকলেটঃ
সাধারন চকলেট খাওয়ার অভ্যাস থাকলে আমাদের উচিৎ নিয়মিত ডার্ক চকলেট খাওয়া। কেননা প্রতিদিন ডার্ক চকলেট খাওয়ার অভ্যাসে আমাদের হার্টকে সুস্থ্য ও সচল রাখতে পারি খুব সহজেই।
চোখের গঠণেঃ
ডার্ক চকলেটের কোকোয়া আমাদের চোখের গঠণ সুন্দর করতে সাহায্য করে এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন ডার্ক চকলেট খাওয়ার অভ্যাসে আমার চোখ হয়ে উঠতে পারে অনেক সুন্দর।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ
ডার্ক চকলেট যেহেতু কোকোয়া ফল থেকে তৈরী। এতে প্রচুর পরিমানে এন্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন অন্যান্য ফলে থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমানে এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে কোকোয়াতে।
এর পুষ্টিগুণ রক্তের শর্করাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা যদি ডার্ক চকলেট নিয়মিত খায় তাহলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
হাড়ে গঠণে ডার্ক চকলেটঃ
যেহেতু কোকোয়া ফল ডার্ক চকলেটের মুল উপাদান। আর ডার্ক চকলেটে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম যা আমাদের দেহের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পুরন করে এবং হাড়ের গঠনে সাহায্য করে।
ত্বকের সুসাস্থ্যতাঃ
ডার্ক চকলের উপকারিতা গুলোর আরেকটি অন্যতম হল ত্বকের জন্য অত্যান্ত উপকারি। ডার্ক চকলেটের প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম ও এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় ত্বকের ক্ষয়রোধ করে ও নতুন ত্বক তৈরীতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ডার্ক চকলেটঃ
বাজারের সাধারন চকলেট না খেয়ে আমাদের ডার্ক চকলেট খাওয়া উচিৎ নিয়মিত। ডার্ক চকলেট আমাদের দেহের রোগ সৃষ্টিকারী জীবানু নষ্ট করে এবং ক্যান্সার সহ নানা রোগ থেকে রক্ষা করে।
শিশুদের মস্তিস্কের বিকাশে ডার্ক চকলেটঃ
বর্তমান সময়ে আমাদের শিশুদের হাতে প্রতিনিয়ত বাজারের চিনি যুক্ত সাধারন চকলেট দিচ্ছি। এর পরিবর্তে আমাদের উচিৎ অর্গানিক ডার্ক চকলেট আমাদের শিশুদের খেতে দেয়া উচিৎ।
ডার্ক চকলের মুল উপাদান কোকোয়াতে প্রচুর পরিমানে ফ্ল্যাভনল নামক উপাদান বিদ্যমান যা আমাদের মস্তিস্কে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে এবং স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
বিষন্নতা দূর করেঃ
ডার্ক চকলেট তৈরী করার মুল উপাদান কোকোয়া ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ট্রিপটফেন নামক উপাদান। আমাদের মস্তিস্কে ডোপামিন নামক হরম নিসৃত হয় এবং আমাদের মেজাজ খুব ভাল থাকে, বিষন্নতা দূর করে এবং শরীরের অনন্দ সৃষ্টি করে। তাই প্রতিদিন অন্তত ৪০ গ্রাম খাঁটি ডার্ক চকলেট খাওয়ার উচিৎ।
সূর্যের ক্ষতিকর বেগুনী রশ্মি থেকে রক্ষা করে ডার্ক চকলেটঃ
ডার্ক চকলেটে প্রচুর পরিমানে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও বায়োঅ্যাক্টিভ রয়েছে যা আমাদের ত্বককে সূর্যের ক্ষতিরক অতিবেগুনী রশ্মি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
শ্বেতী রোগের প্রাকৃতিক ঔষধ এবং শ্বেতী রোগ থেকে মুক্তির উপায়
ডার্ক চকলেট খাওয়ার নিয়ম
কিছু কিছু ডার্ক চকলেটে চিনির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এসব চকলেট বেশি খেলে ডায়েটে বেশি চিনি যোগ হয়ে যেতে পারে। এজন্য ডার্ক চকলেট কিছু নিয়ম মেনে খাওয়া উচিত। দিনে দুই টুকরো ডায়েট চকলেট খেতে হবে।
ডার্ক চকলেট এর ছবি
ডার্ক চকলেট এর দাম
বাংলাদেশে সাধারণত দেশের বাইরে থেকে ডার্ক চকলেট আমদানি করা হয়। এ কারণে অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডার্ক চকলেটের দাম তুলনামূলক বেশি।
বাংলাদেশে সাধারণত ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত দামের ডার্ক চকলেট পাওয়া যায়। যেগুলো একটু ছোট প্যাকের ডার্ক চকলেট সেগুলোর মূল্য 500 টাকা থেকে ৭০০ টাকা। এগুলো একটু লো কোয়ালিটি হয়ে থাকে।
একটু বড় এবং ভালো মানের ডার্ক চকলেট এর মূল্য ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ডার্ক চকলেট এর নাম
বাংলাদেশে সাধারণত ডার্ক চকলেট উৎপাদন করা হয় না। বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে ডার্ক চকলেট বাজারজাত করা হয়। বাংলাদেশের বাজারে কয়েকটি ব্র্যান্ডের ডার্ক চকলেট বেশি বিক্রি করা হয়।
- Amul Dark Chocolate(আমুল ডার্ক চকলেট): এটি একটি ইন্ডিয়ান ডেয়রি প্রোডাক্ট ব্র্যান্ড, যারা ডার্ক চকলেট উৎপাদন করে থাকে।
- Nestlé Dark Chocolate(নেসলে ডার্ক চকলেট): নেসলে একটি আন্তর্জাতিক কোম্পানি, যারা ডার্ক চকলেট সহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে।
- Cadbury Bournville(ক্যাডবেরি বনভিল): বর্নভিল একটি প্রসিদ্ধ ডার্ক চকলেট ব্র্যান্ড, যা ক্যাডবারি দ্বারা তৈরি হয়।
বাংলাদেশী ডার্ক চকলেট
বাংলাদেশী ব্রান্ডের কোন ডার্ক চকলেট নেই। বাংলাদেশে যে ডার্ক চকলেট গুলো পাওয়া যায় তা বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়।
ডার্ক চকলেট খাওয়ার অপকারিতা
- ডার্ক চকলেট বেশি বেশি খেলে আপনার শরীরে বেশি চর্বি লেগে যেত পারে ।
- অতিরিক্ত ডাক চকলেট খেলে অম্লতা দেখা দিতে পারে।
- ডার্ক চকলেট বেশি খেলে আপনার ডায়েটে ব্যাঘাত করতে পারে।
ডেইরি মিল্ক কি ডার্ক চকলেট?
বাংলাদেশের বাজারে যে ডেইরি মিল্ক গুলো পাওয়া যায় সেগুলো মূলত ডার্ক চকলেট না। এসব চকলেটে প্রচুর পরিমাণ চিনি থাকে এমনকি এসব চকলেটে মাঝে মাঝে চিনি দানাও পাওয়া যায়।
ডার্ক চকলেট কোথায় পাওয়া যায়?
বাংলাদেশে বিভিন্ন সুপার শপে বিভিন্ন ব্রান্ডের ডার্ক চকলেট পাওয়া যায়। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন দোকানে ডার্ক চকলেট বিক্রি করে থাকে।
ডার্ক চকলেট খেলে কি ওজন বাড়ে?
অতিরিক্ত ডার্ক চকলেট খেলে আপনার ওজন বাড়তে পারে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের ডার্ক চকলেট আছে যেগুলোতে অনেক বেশি চিনি থাকে। এ কারণে ডার্ক চকলেট কেনার সময় এসব বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।
ডার্ক চকলেট খেলে কি হয়?
তার চকলেট উচ্চ রক্তচাপ কমাতে, কোলেস্টের স্বাভাবিক রাখতে, হৃদরোগ এর ঝুঁকি কমাতে অনেকখানি সহযোগিতা করে।
ডার্ক চকলেট সম্পর্কে শেষ কথাঃ
বাজারের সাধারন চকলেট খাওয়ায় আমরা এবং আমাদের বাচ্চাদের অভ্যস্ত না হয়ে ডার্ক চকলেট খাওয়ার অভ্যাস করলে আমরা ডার্ক চকলেট থেকে ঔষধের মত উপকার পেতে পারি। প্রতিদিনের স্ন্যাকসে ডার্ক চকলেট রাখলে ডার্ক চকলেটের উপকারিতা গুলো আমরা পেতে পারি।