লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ | লিভার ক্যান্সার কি ভাল হয়

লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ | লিভার ক্যান্সার কি ভাল হয়?

যশোরের সানজিদা আক্তার, বয়স মাত্র 25। 

এরইমধ্যে তার শরীরে বাসা বেঁধেছে লিভার ক্যান্সার, ফুলে গেছে পেট, দিন অতিবাহিত করতে হচ্ছে নানারকম যন্ত্রণায়। 

ধারণা করা হয়ে থাকে বিশ্বে প্রতিবছর ৮ লাখ মানুষ লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে বাংলাদেশ লিভার ক্যান্সারে প্রতিবছর প্রাণ হারাচ্ছে ৩১৪৪ জন। 

লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ

লিভার ক্যান্সার আক্রান্ত হলেও প্রাথমিকভাবে তেমন কোনো লক্ষণ কিংবা প্রভাব দেখা যায় না। সাধারণ যেসব লক্ষণ দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছে :

  • বমি
  • বমি বমি ভাব
  • পেট ফুলে যাওয়া
  • পেটের ডান দিকে ব্যথা
  • পা ফুলে যাওয়া
  • ক্ষুধামন্দা
  • ওজন কমে যাওয়া
  • ক্লান্তি
  • মানসিক বিভ্রান্তি
  • চোখ ও ত্বক হলুদ হওয়া
  • শরীরের বিভিন্ন অংশে চুলকানি
  • অস্বাভাবিক ক্ষত বা রক্তপাত
  • জ্বর

লিভার ক্যান্সার কেন হয়

বাংলাদেশি লিভার ক্যান্সারের জন্য প্রধান কারণগুলো হলো :

  • হেপাটাইটিস বি’ ও সি’ ভাইরাস
  • লিভার সিরোসিস
  • ডায়াবেটিকস
  • ফ্যাটি লিভার
  • অ্যালকোহল গ্রহণ
  • স্থূলতা
  • লিভারে জন্মগত ত্রুটি
  • জিনগত লিভারের রোগ

উপরের কারণগুলো সাধারণত লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

লিভার ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায়

লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধে কিছু কিছু নিয়ম মেনে চললে এবং কিছু কিছু অভ্যাস পরিহার করলে লিভার ক্যান্সার অনেকটা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।

  • হেপাটাইটিস বি টিকা নেয়া
  • অতিরিক্ত মদ্যপান বা ধূমপান পরিহার করা
  • অবৈধ মাদক সেবন বন্ধ করা
  • নিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক
  • স্থূলতা নিয়ন্ত্রণ
  • নিয়মিত শরীরচর্চা
  • সুষম খাদ্য গ্রহণ

লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসা

লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসা

মূলত হেপাটাইসিস-বি ভাইরাসের কারণে লিভার ক্যান্সার হয়ে থাকে। হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের মাত্রাটা যদি কমানো সম্ভব হয় তাহলে লিভার ক্যান্সার এড়ানো সম্ভব।

অনেকক্ষেত্রে আবার শরীরের অন্য অংশের ক্যান্সার আক্রান্ত করতে পারে লিভার কেউ। এরূপ লিভার ক্যান্সার কে বলা হয় সেকেন্ডারি লিভার ক্যান্সার।এমতাবস্থায় কঠিন হয়ে দাঁড়ায় চিকিৎসা ব্যবস্থা।

 প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা নিলে সেকেন্ডারি লিভার ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কম থাকে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, লিভার ক্যান্সার মূলত কোন পর্যায়ে আছে তার উপরে নির্ভর করে এ থেকে নিরাময়ের সম্ভাবনা।

সারা পৃথিবীতে ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর অন্যতম কারণ লিভার ক্যান্সার।

তবে আশার কথা হলো, প্রাথমিক অবস্থায় রোগটি নির্ণয় করা গেলে অনেকটাই সম্ভব রোগীকে সুস্থ করে তোলা। 

দ্রুত ওজন কমানোর উপায় 100% কার্যকারী

তবে অধিকাংশ রোগী লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসা নিতে আসছে রোগটি মারাত্মক আকার ধারণ করার পর।তবে লিভার ক্যান্সার যে স্টেজে থাকুক না কেন তার জন্য ভিন্ন ভিন্ন চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে। 

শুধুমাত্র অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা না করেও রোগীকে রক্তনালী বা শিরার মাধ্যমে ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া হয়।

চিকিৎসকদের মতে, রোগীর লিভার ক্যান্সার যদি প্রথম স্টেজে থাকে তাহলে সেটা 90 ভাগ পর্যন্ত নিরাময়যোগ্য।

তবে সেটি দ্বিতীয় স্টেজে চলে যায় তবে রোগ নিরাময়ের আশা 60 থেকে 70 ভাগে নেমে যায়। চিকিৎসকদের মতে লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা দিলে কোন ধরনের অবহেলা না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

লিভার ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ

আমরা জানি যে লিভার আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের চাইতে লিভারের কাজ বেশি। এ কারণে বিভিন্নভাবে লিভারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশি থাকে। 

লিভারে যে সমস্ত রোগ দেখা দেয় তারমধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ লিভার ক্যান্সার।

লিভার ক্যান্সার বিভিন্ন দেশে দেখা দিলেও বাংলাদেশ এর পরিমাণ মাঝামাঝি পর্যায়ে রয়েছে। 

এখন কিভাবে বুঝবেন আপনি লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত কিনা।

লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে প্রাথমিকভাবে আপনার শরীরের ওজন কমতে থাকবে। 

অনেক সময় আপনার পেটের ডান দিকে ব্যথা হতে পারে এবং পেট ফুলে যেতে পারে। লিভার ক্যান্সারের কারণ আপনার জন্ডিস দেখা দিতে পারে। 

সাধারণভাবে লিভার সিরোসিসের ওপর লিভার ক্যান্সার অনেকখানি নির্ভর করে। এসব প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।

কারা লিভার ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন

সাধারণত পুরুষ এবং নারী উভয়কেই সমানভাবে লিভার ক্যান্সার আক্রান্ত হতে দেখা যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুরুষরা নারীদের চেয়ে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে বেশি থাকে। 

সব বয়সের মানুষের লিভার ক্যান্সার হতে পারে তবে 40 থেকে 50 বছর বয়সে মানুষের লিভার ক্যান্সার হবার ঝুঁকি বেশি থাকে। তবে কম বয়সের লোকের লিভার ক্যান্সার হতে পারে। অর্থাৎ সব বয়সের মানুষের লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে। 

বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন কারণে লিভার ক্যান্সার হতে পারে না। নিচে বাংলাদেশের লিভার ক্যান্সারের প্রধান কারণগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

বাংলাদেশে লিভার ক্যান্সারের প্রধান কারণ

  • লিভার সিরোসিস বাংলাদেশে লিভার ক্যান্সারের প্রধান কারণ।
  • হেপাটাইসিস বি ভাইরাস
  • ফ্যাটি লিভার

এছাড়া আরও বিভিন্ন কারণে লিভার ক্যান্সার হতে পারে। তবে প্রধানত যে দেশে এই তিনটি রোগের পরিমাণ বেশি সে দেশে লিভার ক্যান্সারের পরিমাণ বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে বর্তমানে ফ্যাটি লিভারের পরিমাণ বেশি হওয়ায় লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে।

লিভার ক্যান্সার কি ভাল হয়?

আমাদের সাধারন জীবন যাপনে কয়েকটি বিষয় অনুশীলন করলে লিভার ক্যান্সার অনেকটা এরিয়ে থাকা সম্ভব। উপরে লিভার ক্যান্সারের প্রধান কারণ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ অনেকদিন যাবত হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা প্রদান করা হচ্ছে। 16 বছরের বেশি বয়সের সাধারণ মানুষরা এই টিকা গ্রহণ করতে পারবেন। টিকা গ্রহণের মাধ্যমে হেপাটাইসিস-বি ভাইরাস রোধ করা গেলে লিভার ক্যান্সার 60 থেকে 70 ভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব।

আমাদের দেশের প্রধান খাদ্য ভাত। ভাত এবং চিনি ফ্যাটি লিভার তৈরীর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যতদূর সম্ভব ভাত এবং চিনি কম খেতে হবে। 

এছাড়া খাওয়ার পরপরই ঘুমাতে না গিয়ে কমপক্ষে তিন থেকে চার ঘণ্টা ঘুমাতে যেতে হবে। যতদূর সম্ভব ফ্যাট যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। সপ্তাহে কমপক্ষে পাঁচ দিন 30 মিনিট করে হাঁটতে হবে যেটা লিভারের ফ্যাট কমাতে সাহায্য করবে।

লিভার ক্যান্সার মূলত ভয়ের কোন কারন নয়। উপরের বিষয়গুলো মেনে চললে কয়েক বছরের ভিতর বাংলাদেশ থেকে 100 ভাগ লিভার ক্যান্সার দূর করা সম্ভব।

1 thought on “লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ | লিভার ক্যান্সার কি ভাল হয়”

Leave a Comment