টক দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

টক দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকে সঠিক ভাবে জানিনা।রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর অন্যতম মাধ্যম ভাল খাবার, টক দই খাওয়ার উপকারিতা গুলোর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি অন্যতম। 

আমাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ দই পছন্দ করলেও দই হিসেবে টক দই হয়ত গুরুত্ব কম দিয়ে থাকি। তবে টক দই আমাদের শরীরের জন্য দারুন উপকারিতা রয়েছে।

আমরা অনেকে হয়ত শুনে থাকি মানুষের দ্বিতীয় মস্তিস্কো গাট বা অন্ত্র। অর্থাৎ আমাদের অন্ত্র সুস্থ্য থাকলে আপনি আমি সম্পূর্ণ সুস্থ থাকব। আর এই গাট বা অন্ত্রকে সুস্থ রাখতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে টক দই। 

টক দইয়ে প্রচুর পরিমান প্রোবায়োটিক রয়েছে যা গাটের সাস্থ্যকে ভাল রাখে। প্রোবায়োটিক বা ভাল ব্যাক্টেরিয়া আমাদের শরীরের জন্য কতটুকু ভাল তা আগে আমরা জেনেছি এবং কিভাবে প্রোবায়োটিক বাড়িতে তৈরী করতে পারি আমরা তুলে ধরেছি।

বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে সরাসরি দুধ খাওয়া মানুষের জন্য সমস্যা হতে পারে। কারন গরুর দুধে প্রচুর পরিমানে শক্তি বা পুষ্টি রয়েছে যা গরুরু বাছুরের জন্য আল্লাহ দান করেছেন। তাই আমাদের জন্য হজমে সমস্যা হওয়া স্বাভাবিক। তবে আমরা দুধ ফার্মেন্ট করে টক দই হিসেবে খেতে পারি।

টক দইয়ে আছে প্রচুর পরিমানে ভাল ব্যাক্টেরিয়া যা আমাদের শরীর ও পেটের জন্য খুব উপকারি। এছাড়াও টক দইয়ে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আমিষ, ভিটামিন “এ”, ভিটামিন “বি-৬” এবং ভিটামিন “বি-১২”।

Table of Contents

টক দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

টক দই খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে অনেক। অনেকে সরাসরি দুধ খেতে পছন্দ করেনা। তারা খুব সহজে টক দই খাওয়ার মাধ্যমে পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে পারে।

টক দই পুষ্টিতে ভরপুর একটা জনপ্রিয় খাবার। তবে টক দই এর যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি এটি খাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। নিচে টক দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

টক দই খাওয়ার উপকারিতা

টক দই খাওয়ার উপকারিতা
টক দই খাওয়ার উপকারিতা

টক দইয়ে আছে প্রচুর পরিমানে ল্যাক্টিক এসিড আমাদের শরীরের জন্য অত্যান্ত প্রয়োজনীয়। টক দই খাওয়ার উপকারিতা ও বিষ্ময়কর পুষ্টিগুণ নিচে উল্লেখ করা হল।

ওজন কমাতে টক দই এর উপকারিতা

টক দই এমন কি খাবার যা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় টক দই যুক্ত করা উচিৎ। প্রতিদিন টক দই খাওয়ায় শরীরের অতিরিক্ত ওজন হ্রাস পায়। টক দইয়ে ল্যাক্টিক এসিড  থাকায় ওজন কমায় দ্রুত। টক দইয়ে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন থাকায় খুদা কম লাগে তাই ওজন কমাতে সাহায্য করে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে

যেহেতু টক দই প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ যা আমাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন নিয়ম করে রাতে খাওয়ার পরে এক দুই চামচ টক দই খাওয়ার অভ্যাসে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব খুব সহজে।

কোষ্ঠ্যকাঠিণ্য দূর করে টক দই

টক দই ল্যাক্টিক এসিড সমৃদ্ধ এবং এতে প্রচুর পরিমানে প্রোবায়োটিক রয়েছে যা আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। পেটের সাধারন সমস্যা দূর করে এবং কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করে। টক দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক বা ভাল ব্যাক্টেরিয়ার জন্য দ্রুত খাবার হজম হতে সাহায্য করে।

ঘুম ভাল হয়

প্রতিদিন রাতে হালকা খাবার গ্রহন করে এক-দুই চামচ টক দই খাওয়ার অভ্যাস করা উচিৎ আমাদের সকলের। কারন হজম ভাল হয় এবং ঘুমের সমস্যা হয় না। রাতে টক দই খেলে শরীরের এসিড লেভেল স্বাভাবিক থাকে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে

আগেই উল্লেখ করেছি আমাদের সুস্থ্য থাকার জন্য আমাদের গাট বা অন্ত্রকে সুস্থ্য রাখতে হবে। আর গাট বা অন্ত্র সুস্থ্য থাকলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আর টক দই আমাদের গাট বা অন্ত্রকে সুস্থ্য রাখে। কারন গাট বা অন্ত্রের খাবার হল প্রোবায়োটিক যা রয়েছে টক দইয়ে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

টক দই প্রতিদিন সাধারন ভাবে পরিমিত ভাবে খাওয়ার অভ্যাসে ডায়াবেটিস রোগীদের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

হৃদযন্ত্র ভাল রাখে টক দই

টক দই খাওয়ার উপকারিতা গুলোর অন্যতম হল হৃদযন্ত্র সুস্থ্য রাখা বা যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে তাদের হার্টের রোগ নিয়ন্ত্রনে রাখা যায় খুব সহজেই।

আলসার হওয়ার সম্ভাবনা কমায়

টক দই আমাদের পাকস্থলীর পরিবেশ ভাল রাখে অর্থাৎ খাবার হজমে সাহায্য করে। কারন ল্যাক্টিক এসিড থাকায় কোন প্রকার গ্যাস্টিকের সমস্যা হয় না। তাই আলসার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে

প্রতিদিন রাতে খাবার পরে ঘুমানোর আগে পরিমিত টক দই খেলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক ভাবে বজায় রাখে।

টক দই দিয়ে রূপচর্চা

আমাদের ওয়েবসাইটে প্রোবায়োটিক সম্পর্কে আগে বলেছি যে প্রোবায়োটিক আমাদের ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। ঠিক তেমনি টক দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। তাই আমাদের প্রতিদিন নিয়ম করে টক দই খাওয়ার অভ্যাস করা উচিৎ।

ক্লান্তি দূর করে

টক দই শরীরের জন্য অত্যান্ত উপকারী যা নিয়মিত খাওয়ার কারনে আমাদের শরীরের ক্লান্তি দূরে করে এবং প্রশান্তি এনে দেয়।

কালো জিরা খাবার নিয়ম | কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

টক দই এর ক্ষতিকর দিক

টক দই এর সাধারণত কোন নির্দিষ্ট ক্ষতিকর দিক নেই। যদি কোন কৃত্রিম উপাদান দইয়ের সাথে না মেশানো হয় তবে এটি ক্ষতিকর নয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে টক দই খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

টক দই এর ক্ষতিকর দিক:—

  • যাদের ঠান্ডা-কাশি আছে তাদের যথা সম্ভব টক দুই কম খাওয়া উচিত। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার মতে টক দই খেলে ঠান্ডা এবং কাশি বেড়ে যায়।
  • ফ্রিজে টক দই অনেকদিন রেখে দিলে এর ব্যাকটেরিয়ার গুনাগুন কমে যায়। ফলে উপকারের পরিবর্তে অপকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • অতিরিক্ত টক দই খেলে পেট ফাঁপে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে।
  • দইয়ে অতিরিক্ত পরিমাণ চর্বি থাকার কারণে বেশি দই খেলে ওজন বাড়তে পারে।
  • নিয়মিত দই খেলে অনেকের হাঁটুতে ব্যথা জনিত সমস্যা হতে পারে।

ওজন কমাতে টক দই খাওয়ার নিয়ম

ওজন কমাতে টক দই খাওয়ার নিয়ম
ওজন কমাতে টক দই খাওয়ার নিয়ম

টক দই 22% ওজন কমাতে এবং ৬১% ফ্যাট বার্ন করতে সাহায্য করে। তবে এর জন্য অবশ্যই সঠিক নিয়মে টক দই খেতে হবে।

ওজন কমাতে টক দই খাওয়ার নিয়ম:—

  • টক দইয়ের সাথে জোয়ান কিংবা জিরার গুড়া মিশিয়ে প্রতিদিন খেলে এটি আপনার শরীর কমাতে সাহায্য করবে।
  • টক দই এর সাথে খেজুর কিংবা আখরোট মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি আপনার মেদ ঝরাতে সাহায্য করে।
  • ওজন কমাতে এক বাটি দই এর সাথে ভেজানো চিয়া বীজ মিশিয়ে নিয়মিত খেলে আপনার ওজন খুব দ্রুত কমতে সাহায্য করবে।
  • টক দই এর সাথে মধু মিশিয়ে খেলে এটি অনেক সুস্বাদু হয়। এছাড়াও এটি দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • ওজন কমাতে টক দই এর সাথে ওটস মিশিয়ে খেতে পারেন।

টক দই মুখে মাখার উপকারিতা

রূপচর্চায় বিভিন্নভাবে টক দইয়ের ব্যবহার অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। টক দইতে এমন কিছু উপাদান আছে যেটি ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। নিচে টক দই মুখে মাখার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

  • টক দই এর সাথে লেবু মিশে মুখ লাগিয়ে দুই তিন মিনিট ধরে ঘষে তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে ত্বক অনেক বেশি উজ্জ্বল দেখাবে।
  • টক দই এর সাথে বেসন মিশিয়ে পেস্ট করে নিয়মিত মুখে লাগালে ব্রণের সমস্যা দূর হয়। এছাড়াও দ্রুত ত্বক পরিষ্কার হয়।
  • টক দই ও মধু মুখের উজ্জ্বলতা ফেরাতে দারুন কাজ করে।
  • মুখে টক দই ব্যবহার করলে এটি প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে।
  • টক দই মুখের আদ্রতা অনেক সময় ধরে রাখতে সাহায্য করে।
  • নিয়মিত টক দই মুখে ব্যবহার করলে আপনার মুখে বয়সের ছাপ খুব সহজে পড়বে না।
  • নিয়মিত টক দই ব্যবহারে ত্বকের কালো দাগ বা ছোপ উঠতে সাহায্য করে।

চুলে টক দই এর উপকারিতা

চুলে টক দই এর উপকারিতা
চুলে টক দই এর উপকারিতা

টক দই শুধুমাত্র স্বাস্থ্য কিংবা ত্বকের জন্য উপকারী নয়। এটি চুলের জন্য অনেক উপকারী।

নিয়মিত চুলে টক দই ব্যবহার করলে চুল এবং মাথার ত্বকের জন্য এটি অনেক উপকারে আসে।

 চুলে টক দই এর উপকারিতা:—

  • নিয়মিত চুলে টক দই ব্যবহার করলে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
  • গবেষণায় দেখা গেছে টক দই তে এমন কিছু উপাদান আছে যেটি খুব সহজে খুশকি কমিয়ে দিতে পারে।
  • চুলের আদ্রতা ধরে রাখতে মাথায় নিয়মিত টক দই ব্যবহার করতে পারেন।
  • চুলে টক দই ব্যবহার করলে চুল খুব সহজে শুষ্ক কিংবা রুক্ষ হয়ে যায় না।
  • চুলে টক দই ব্যবহারে চুলের গোড়া শক্ত হয়। ফলে চুল পড়ার সমস্যা অনেকখানি কমে যায়।
  • টক দই নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে ফলে চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়।
  • নিয়মিত টক দই ব্যবহারে মাথার ত্বকের বিভিন্ন সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকখানি কমে যায়।

খালি পেটে টক দই খাওয়ার উপকারিতা

আমরা আগেই টক দই খাওয়ার বিভিন্ন উপকারী দিক সম্পর্কে জেনেছি। তবে খালি পেটে টক দই খেলে উপকার অনেক বেশি পাওয়া যায়।

খালি পেটে টক দই খাওয়ার উপকারিতা:—

  • খালি পেটে টক দই খেলে পেট ফাঁপা কিংবা ডায়রিয়ার সমস্যার দ্রুত সমাধান হয়।
  • যারা ওজন কমাতে চান তারা খালি পেটে টক দই খেলে সবচাইতে বেশি উপকার পাবেন।
  • খালি পেটে টক দই খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি বৃদ্ধি পায়।
  • প্রতিদিন খালি পেটে টক দই খেলে এটি হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধিতে এবং হাড় মজবুত থাকতে সাহায্য করে।
  • খালি পেটে টক দই খেলে ত্বকের লাবণ্য বৃদ্ধি পায়।
  • সকালে একবাটি টক দই খেলে সারাদিন শরীর চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে।

সকালে টক দই খাওয়ার উপকারিতা

সকালে টক দই খেলে আপনারা খুব সহজে এর উপকারিতা পরখ করতে পারবেন। সকালে টক দই খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

  • সকালে টক দই খেলে এটি আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধিতে অনেক সাহায্য করে।
  • সকালে টক দই খেলে এটি আপনার শরীরের বিভিন্ন সংক্রমণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
  • আপনার শরীরে অন্ত্রের ক্রিয়া-কলাপ সুরক্ষিত রাখতে প্রতিদিন এক বাটি টক দই যথেষ্ট।
  • প্রতিদিন সকালে টক দই খেলে এটি আপনার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

টক দই সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর:

রাতে টক দই খেলে কি হয়?

আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের মতে রাতে টক দই খেলে ঠান্ডা কাশি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

টক দই খেলে কি গ্যাস হয়?

টক দই খেলে সাধারণত গ্যাসের সমস্যা কম হয়। তবে যাদের অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা তাদের টক দই খেলে অনেক সময় গ্যাস বৃদ্ধি পেতে পারে।

টক দই খেলে কি ওজন বাড়ে?

সাধারণত ওজন কমাতে টক দই একটি জনপ্রিয় খাবার। তবে অতিরিক্ত টক দই খেলে আপনার ওজন বেড়ে যেতে পারে।

দই খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে শেষ কথাঃ

টক দই সহজলভ্য একটি খাদ্য উপাদান। যা আমরা নিজেদের বাড়িতে তৈরী করতে পারি খুব সহজেই। টক দই আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখা উচিৎ অন্তত প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে।

Leave a Comment