পাইলস এর লক্ষণ এবং পাইলস এর চিকিৎসা সম্পর্কে আমরা অধিকাংশই অবগত নয়।
আমাদের ভেতর অনেকে পাইলস রোগে ভুগেন।আজকে আমরা আলোচনা করব পাইলস রোগের কারণ ও চিকিৎসা নিয়ে।
পাইলস কি? পাইলস এর লক্ষণ এবং পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়
আপনাদের ভেতর যাদের পাইলস বা Haemorrhoids আছে তাদের জন্য আজকের এই আলোচনাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাইলস রোগের কারণ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে আজকের আলোচনাটি সম্পূর্ণ পড়তে হবে।
আজকের আলোচনা থেকে পাইলস সম্পর্কে কিছু দিক নির্দেশনা পাবেন এবং বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ধারণা পাবেন।
পাইলস কি?
সাধারণত পাইলসের নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা নাই। তবে সাধারণভাবে পাইলস বলতে আমরা বুঝি পায়ুপথের বা মলদ্বারের একটি রোগ। পাইলস এর ফলে পায়ুপথের বা মলদ্বারের রক্তনালীর স্ফীতি ঘটে।
পাইলস এর লক্ষণ
পাইলস রোগের সাধারণত যে সকল লক্ষণ দেখা যায় সেগুলো হলো :-
- মলদ্বার বা পায়ুপথ ফুলে যায়।
- মলদ্বার বা পায়ুপথে প্রচুর পরিমাণ ব্যাথা হতে পারে এবং মলত্যাগে সমস্যা হতে পারে।
- মলত্যাগ বা অন্য সময় মলদ্বার বা পায়ুপথ থেকে রক্ত বের হতে পারে।
- অকারনে পায়খানার রাস্তায় চুলকাতে পারে।
এছাড়া মলদ্বার বা পায়ুপথে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পাইলস কেন হয়
পাইলস রোগ থেকে নিরাময় পেতে হলে বা এ রোগ থেকে দূরে থাকতে হলে সর্বপ্রথমে আমাদের পাইলস রোগের কারণ সম্পর্কে জানতে হবে।
লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ | লিভার ক্যান্সার কি ভাল হয়
পাইলস রোগের প্রধান কারণের ভিতরে যেগুলো আছে সেগুলো হল :-
- পাইলস রোগের অন্যতম কারণ বংশগত। অনেকের বাবা-মা পাইলস রোগে আক্রান্ত হলে তাদের সন্তানদের ভেতরে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
- গর্ভবতী মায়েরা গর্ভাবস্থায় সাময়িকভাবে পাইলস রোগে আক্রান্ত হতে পারে। অবশ্য এটি বড় ধরনের কোন সমস্যা না।
- লাইফ স্টাইল পাইলস রোগের জন্য একটি অন্যতম ফ্যাক্ট হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যাদের অধিকাংশ সময় বসে কাজ করতে হয়। অতিরিক্ত সময় বসে কাজ করলে পাইলস রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকে।
- যাদের শরীর অতিরিক্ত মোটা বা শরীরে অনেক চর্বি আছে এমন ব্যক্তিদের পাইলস রোগ হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।
- আপনার প্রতিদিনকার খাবার পাইলস রোগ হবার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। আপনাদের ভেতর যারা আঁশ যুক্ত বা ফাইবার যুক্ত খাবার খান না। তাদের পাইলস হবার ঝুঁকি থাকে।
- যারা নিয়মিত পানি কম খান তাদের পাইলস হবার সম্ভাবনা থাকে।
- অতিরিক্ত ফাস্টফুড বা অতিরিক্ত ঝাল যুক্ত খেলে পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- অনেক সময় পায়খানার সমস্যা থাকলেও পাইলস হতে পারে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে কিংবা অনেকদিন থেকে পাতলা পায়খানায় ভুগছেন দুই অবস্থাতেই পাইলস হবার ঝুঁকি থাকে। বাথরুমে বেশি সময় বসে থাকলে বা অতিরিক্ত চাপ দিয়ে পায়খানা করলে পাইলস হবার ঝুঁকি থাকে।
এছাড়া বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হলে পাইলস হবার ঝুঁকি থাকতে পারে।
- অনেকদিন যাবত করনিক কাশিতে ভুগলে পাইলস হবার সম্ভাবনা থাকে।
- কোলন ক্যান্সার
- লিভার সিরোসিস
- দীর্ঘদিন প্রস্রাবের সমস্যা
উপরের রোগ গুলো আক্রান্ত হলে এবং অনেক দিন এই রোগে ভুগলে পাইলস হবার ঝুঁকি থাকে।
পাইলস এর চিকিৎসা
আমরা এখন আলোচনা করব কিভাবে আমরা পাইলস রোগ থেকে ভালো থাকতে পারি এবং সঠিক চিকিৎসা কিভাবে গ্রহণ করতে পারি।
পাইলস রোগ থেকে বাঁচতে হলে পাইলস রোগীকে খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তন, লাইফস্টাইল পরিবর্তন করতে হবে এবং যদি অতিরিক্ত খারাপ অবস্থা হয় তবে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
পাইলস রোগ বৃহতাকার ধারণ করলে যত দ্রুত সম্ভব ভালো ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। কিন্তু বর্তমানে পাইলসের চিকিৎসা ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যা হল অধিকাংশ রোগী এ রোগের জন্য হাতুড়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।
এসব হাতুড়ে ডাক্তার পাইলস সম্পর্কে অনভিজ্ঞ হওয়ায় রোগীর উপকারের পরিবর্তে ক্ষতির পরিমাণই বেশি হয়ে থাকে।
পাইলস হলে কি কি খাওয়া নিষেধ
প্রাথমিকভাবে পাইলস রোগের লক্ষণ দেখা দিলে বা পাইলস রোগের প্রাথমিক অবস্থায় কিছু নিয়ম মেনে চললে পাইলসের রোগীর অনেকটাই সুস্থ থাকা সম্ভব।
পাইলস রোগীদের যেসব নিয়ম গুলো মেনে চলা উচিত:-
- পাইলস রোগীদের প্রথম এই যে বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে সেটি হল খাবার। যে খাবারে ফাইবার নাই সে খাবার পুরোপুরি এড়িয়ে চলতে হবে।
- মাংস অনেকটাই কম খেতে হবে। বিশেষ করে গরুর মাংস একেবারেই বাদ দিতে হবে। যদি পারা যায় তবে চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে সকল ধরনের মাংস এড়িয়ে চললে বা না খেলে চিকিৎসা ক্ষেত্রে আরো ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
পাইলস হলে কি কি খাওয়া যাবে
- পাইলস রোগীদের মাছ খাওয়ার ক্ষেত্রে সামুদ্রিক ছোট মাছ গুলো খেতে পারবেন।
- পাইলস রোগীদের প্রচুর পরিমাণ সবুজ শাকসবজি এবং সালাত বেশি পরিমাণে খেতে হবে।
- পাইলস রোগীদের জন্য সবচেয়ে উপকারী খাবার হলো পেঁপে। পেঁপে সাধারণত পায়খানাকে নরম করে দেয়। পেঁপে পাইলস রোগীদের জন্য খুব বেশি উপকারী খাবার। পেঁপে আপনি রান্না করে, ভাজি করে, কাঁচা পেঁপে, কিংবা সালাত হিসেবে পেঁপে খেতে পারবেন। এবং আপনার খাবারের লিস্ট অনেক বেশি পরিমাণে পেঁপে রাখবেন।
- পাইলস রোগীদের আরো একটি উপকারী খাবার হল সাজনা বা সজিনা। সাজনা গাছের পাতা সবজি হিসেবে খেলে পাইলস রোগীদের অনেক উপকারে আসে।
পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসা
- পাইলস রোগীদের আরো একটি ভালো পরামর্শ হলো হট সিস বাথ বা গরম পানির গোসল নেওয়া। এক্ষেত্রে রোগীরা বাথ ট্যাব না থাকলে বড় গামলা ব্যবহার করতে পারেন। একটি বড় গামলাতে কুসুম গরম পানি নিয়ে সেটাতে হালকা লবণ বা পটাশিয়াম দিয়ে পাইলস রোগী ১০ থেকে ১৫ মিনিট বসে থাকলে অনেক উপকার পাবে। এ কাজটি প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার করতে হবে।
- পাইলস রোগীদের সুস্থ থাকার জন্য আরো একটি ভালো উপায় হল নিয়মিত ব্যায়াম করা। যদি পায়ুপথে ব্যথা না থাকে তবে নিয়মিত হাঁটার চেষ্টা করতে হবে।
পাইলস রোগের প্রকারভেদ
পাইলস রোগ কে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।
- ইন্টারনাল বা ভেতরের পাইলস
- এক্সটার্নাল বা বাইরের পাইলস
- মাঝামাঝি অবস্থানে পাইলস
এছাড়া গ্রেডের বা ডিগ্রির দিক থেকে পাইলস কে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়।
- প্রথম ডিগ্রি
- দ্বিতীয় ডিগ্রি
- তৃতীয় ডিগ্রি
- চতুর্থ ডিগ্রী
এটা সাধারণত ডাক্তারদের কাজ তবুও আপনাদেরকে ধারণা দিয়ে রাখলাম। অনেক সময় ডাক্তাররা বলে আপনার পাইলস রোগ তৃতীয় ডিগ্রি বা চতুর্থ ডিগ্রিতে চলে আসছে, আপনার অপারেশন করা লাগবে, না হলে আপনি সুস্থ হবেন না।
আপনাদের ভিতরে যারা সাধারণত অফিসিয়াল কাজ বা দীর্ঘ সময় বসে কাজ করেন তাদের জন্য পাইলস রোগের একটা ঝুঁকি থেকে যায়।
এক্ষেত্রে আপনারা কাজের ফাঁকে প্রতি এক ঘন্টা পরপর হালকা ভাবে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। এ কাজটি করলে পাইলসের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে।
এছাড়া যে খাবারে ফাইবার আছে সেগুলো পাইলসের রোগীদের নিয়মিত খেতে হবে।তাছাড়া পাইলসের রোগীদের খাবারের লিস্টে প্রচুর পরিমাণ পানি রাখতে হবে।
পাইলস এর চিকিৎসা কোথায় ভালো হয়
পাইলস রোগের এলোপ্যাথিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে তিন-চার রকমের চিকিৎসা রয়েছে।
- যন্ত্রপাতি দিয়ে পাইলসের চিকিৎসা।যন্ত্রপাতি চিকিৎসা এবং সার্জারি চিকিৎসা এক নয়। যন্ত্রপাতি দিয়ে চিকিৎসার একটি অন্যতম উদাহরণ হল রাবার ব্যান্ড লাইগেশন। এই চিকিৎসা মাধ্যমে পাইলসের রোগীর পাইলসটিতে রাবার দিয়ে আটকে দেয়া হয়। এবং দেখা যায় যে কিছুদিন পর আস্তে আস্তে পাইলসটি কেটে পড়ে যায়।
- ইনজেকশন এর মাধ্যমে পাইলসের চিকিৎসা। ইনজেকশন এর মাধ্যমে পাইলসের চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের সমস্যা হল এই ইনজেকশন নিয়ে অনেক সময় রোগীদের সাথে বড় ধরনের প্রতারণা করা হয়।
- সার্জারির মাধ্যমে পাইলসের চিকিৎসা।
- মেডিসিনের দ্বারা পাইলসের চিকিৎসা। সাধারণত মেডিসিন দ্বারা পাইলসের চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা পাইলসের গ্রেডের দিকে নজর দেয়। পাইলসের গ্রেট প্রথম বা দ্বিতীয় থাকলে সাধারণত ডাক্তারেরা মেডিসিনের দ্বারা পাইলসের চিকিৎসা করে থাকেন।
এছাড়া পাইলস রোগের ক্ষেত্রে আধুনিক কিছু চিকিৎসা বর্তমানে করা হয়। আধুনিক এ চিকিৎসায় অপারেশন বাদেই পাইলস রোগীরা সুস্থ হয়ে থাকে।
হাতুড়ে চিকিৎসক দ্বারা পাইলস রোগীর চিকিৎসা করা হলে অনেক সময় বড় ধরনের বিপদের সম্মুখীন হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় হাতুরে চিকিৎসার দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণের ফলে পাইলস রোগীদের ক্যান্সার হয়ে যেতে পারে। এবং এই ক্যান্সারের ফলে রোগী একদিন ধুকে ধুকে মারাও যেতে পারে।
পাইলস এর হোমিও চিকিৎসা
পাইলস রোগীরা অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা করাতে না চাইলে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাও করাতে পারে। বর্তমানে পাইলস রোগের খুব ভালো হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা রয়েছে। এখানে আমি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার ঔষধের নাম বলছি না। সাধারণত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় রোগের লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়।
পাইলস এর হামদর্দ চিকিৎসা
পাইলস রোগীরা চাইলে রোগের প্রাথমিক অবস্থায় ইউনানী চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারে। ইউনানী বা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় পাইলস রোগের প্রাথমিক অবস্থার জন্য ভালো কিছু ঔষধ আছে।
ভালো কোন ইউনানী বা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের কাছ থেকে পাইলস রোগীরা এর চিকিৎসা নিতে পারেন।
অ্যালোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ক্ষেত্রে পাইলস রোগের অপারেশন বাদেই ভালো চিকিৎসা আছে। তবে যদি এমন হয় যে পাইলস রোগীর অপারেশন করাই লাগবে।
অপারেশন ব্যতীত পাইলস রোগীর কোনোভাবেই সুস্থ হওয়া সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে অবশ্যই একজন ভালো মানের সার্জনকে দেখাবেন। এক্ষেত্রে পিজি হাসপাতালে ভালো মানের সার্জন পাবেন। কারণ পিজি হাসপাতালে কলরেক্টলসার্জনদের আলাদা ডিপার্টমেন্ট আছে।
অনেকে বলেন পাইলস রোগী ১০০% সুস্থ হয় না। অনেক সময় দেখা যায় চিকিৎসার পরেও পাইলস রোগ ফিরে আসতে পারে।
এটি সাধারণত ভালো মানের চিকিৎসক দ্বারা অপারেশন না করলে এমনটি ঘটে। এছাড়া পাইলস রোগী প্রতিদিন ইসুবগুলের পানি খেতে পারেন।
আপনাদেরকে পাইলস রোগ সম্পর্কে বেসিক ধারণা দেওয়া হয়েছে। আশা করি আপনারা উপরের নিয়ম গুলো মেনে চললে পাইলস রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।
2 thoughts on “পাইলস এর লক্ষণ | পাইলস এর চিকিৎসা”